//রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি//
জনস্থানকে নারীবান্ধব ও নিরাপদ করার মাধ্যমে নারীর পথচলায় করণীয় বিষয়ে রাঙামাটির গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। "নারীর চলার পথ নিরাপদ করতে আমি সচেষ্ট, আপনি?" এই স্লোগান নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জনবহুল স্থান গুলোতে যাতে নারীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে সেজন্য গণমাধ্যমে এই সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করার আহবান জানানো হয়।
মঙ্গলবার ৮ মার্চ সকালে আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (আরপিটিাই) এর সম্মেলন কক্ষে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর তারুণ্যের প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা, ইউএনডিপি এর মানবাধিকার কর্মসূচী এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরােধে সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইনের আওতায় এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এই ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য হলো নারীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালার সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে তা নীতি নির্ধারকদের জানানো যাতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায়। যার ধারাবাহিকতায় গত এক বছর ১০ টি (দশ) যুব সংগঠন ১০ টি (দশ) জেলায় ক্যাম্পেইনটি পরিচালনা করছে। ক্যাম্পেইনটি যথাক্রমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল,পটুয়াখালি, চট্রগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, নড়াইল, নাটোর এবং বগুড়া জেলায় পরিচালিত হচ্ছে। রাঙামাটি জেলায় এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠিত করা, জেলা পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজন করা, বাস্তবতার নিরিখে ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্য অংশগ্রহণমূলক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা, যুব সংগঠন, গণমাধ্যম কর্মী, স্থানীয় নাগরিক, পরিবহন খাত ও শপিং মল ও হাটবাজারকে সম্পৃক্ত করে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন অংশীদারদের জন্য সভা আয়োজন করা, যুব সংগঠনগুলোর মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক বিশ্লেষণ এবং গণ প্রচারাভিযান চালানো হয়।
জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাজিদ-বিন-জাহিদ (মিকি) এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন তরুণদের প্রতিনিধি পলি ত্রিপুরা ও শুভ মন্ডল।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও রাঙামাটি জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত থেকে বক্তব্য রেখেছেন।
এসময় বক্তারা বলেন, জনস্থানসহ অন্যান্য জায়গায় নারী ও কন্যা শিশুদের উপর যৌন হয়রানি ও নানাবিধ যৌন সহিংসতা বাংলাদেশ এমনকি বিশ্বের অনেক সভ্য দেশেও নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়টাতে নারীরা সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যেমও নানা ধরনের নিপীড়ন এবং যৌন হয়রানি বা সিহংসতার শিকার হচ্ছে। যা নারীর পূর্ণ সম্ভাবনা এবং জীবেনর সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণকে বাধাগ্রহস্ত করেছে। নারীর অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে এসব ঘটনাগুলোই প্রধান অন্তরায়।
জনস্থানে নারী ও কন্যা শিশুদের হয়রানি ও সহিংসতা বিষয়ে নিরবতা ভাঙ্গা; সময়ের সাথে সাথে আচরনে ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা, ক্যাম্পেইনে ভূমিকা রাখতে যুব সংগঠনগুলোকে যুক্ত করা; ভুক্তভোগী ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সহিংসতা বন্ধে কথা বলতে উৎসাহিত করা; অপরাধীদেরকে দৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট বার্তা দেয়া; এবং এই সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের প্রচলিত বিধি-বিধানের সাথে সমন্বিত করা এই ক্যাম্পেইনের অন্যতম অর্জন। ক্যাম্পেইনের বিস্তারিত জানতে স্যোশাল মিডিয়া ও ওয়েবসাইট (www.wspp-bd.org) ভিজিট করুন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮.২ এবং ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রীয় ও জনজীবেনর সবক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার এবং চলাফেরার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ অনুযায়ী শ্রমবাজার ও কর্মক্ষত্রে সমান অধিকারসহ সব ধরেনর জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
আলোচনা সভা থেকে দেশের সকল স্থানে নারীদের চলাচলের স্থান সমূহকে নিরাপদ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়।
নারী সহিংসতা শিকার হলে তাদের নাম ও পরিচয় এবং ছবি প্রকাশে রাষ্ট্রের নির্দেশনা অনুসরণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও পার্বত্য রাঙামাটির মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য যেন রক্ষা করা হয় এতে লেখনিতে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে গণমাধ্যমকর্মীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।
সম্পাদক – মাহমুদুল হাসান সোহাগ | ঠিকানা – বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি | মোবাইল- ০১৬৯০-১৪৪৫৪