'সংঘাত নয়,জাতীয় ঐক্য চাই' এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক একটি রাজনৈতিক দল ও পোষ্যসন্ত্রাসী দিয়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জারী রেখে অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয় সাজেক পর্যটন রোড উজোবাজারে।
আজ ১৪ অক্টোবর সোমবার সাজেক বাঘাইছড়ির বিভিন্ন এলাকার হাজারো জনতা পায়ে হেঁটে,ডিজেল ইঞ্জিন চালিত ট্রয়লার,জীপ গাড়ি,মাহেন্দ্র,সিএনজি ও মোটর সাইকেল যোগে সকাল ৮টা হতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের উদ্ধেশ্যে জড়ো হতে থাকে সাজেক পর্যটন রোড বাঘাইহাট বনানী বন বিহার মূল ফটকে।
'মারামারি নয়,ঐক্য চাই', সংঘাতে ধ্বংস,ঐক্যই মুক্তি,হাতে লেখা প্লেকার্ড উচিয়ে, যুদু নয়,যদা য়োই,এক দফা,এক দাবি শ্লোগানে সকাল ১০টায় বনানী বন বিহার মুল ফটক থেকে সাজেক পর্যটন মেইন রোড দীর্ঘ ঢেড় কিলো রাস্তা পায়ে হেঁটে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে উজোবাজারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি মি.মেহেন্দ্র ত্রিপুরা'র সভাপতিত্বে,সদস্য সচিব বাবু ধন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাজেক কারবারী এসোশিয়েশনের সভাপতি মি.নতুন জয় চাকমা,সাজেক জুমচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মি.জোতি লাল চাকমা(কারবারী),৩৬নং সাজেক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মি.পরিচয় চাকমা। সাজেক ও বাঘাইছড়ির বঙ্গলতলী,রুপারীসহ বিভিন্ন এলাকার কারবারী-হেডম্যান,গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমাবেশে উপস্হিত ছিলেন।
দেশ স্বাধীনের পর হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তার ওপর যে দমন-পীড়ন, জেলজুলুম, ডাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সেনা শাসন বিদ্যমান রয়েছে তা থেকে প্রমাণিত হয় পাহাড়ে সংখ্যালুঘু জাতিগোষ্ঠীর নিধনই রাষ্ট্রীয় মূল লক্ষ্য। বর্তমান যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত তাও সরকারের সৃষ্ট বলে দাবি করে বক্তব্য তুলে ধরেন, কারবারী এসোশিয়েশনের সভাপতি মি.নতুন জয় চাকমা।
আমরা জুমচাষী ও ক্ষেতে খাওয়া সাধারণ মানুষ।আমরা শান্তি চাই।আমাদের অধিকার নিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে চাই।চলমান রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন,জাতিগত সংঘাতের কারনে আমাদের জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। সাধারণ জুমচাষী পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি উদাত্ত্ব আহবান অচিরেই পাহাড় থেকে সেনা শাসন প্রত্যাহার, সেটলারদের সমতলে পূনর্বাসন, বে-দখলকৃত জায়গা ফেরৎ দিয়ে উদ্ভাস্তু পাহাড়িদের পূনর্বাসন ও ইউপিডিএফ-জেএসএস দুই দলের ঐক্যর আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন জুমচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মি.জোতি লাল চাকমা।
৫আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার পতন হয়ে ড:ইউনুসকে প্রধান করে অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।গত কয়দিন আগে দীঘিনালা-খাহড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি পর পর সাম্প্রদায়িক হামলায় নিরপরাধ ছাত্র জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। লুটপাঠ করা হয়েছে পাহাড়িদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। পাহাড়ি অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্হ হয়ে বর্তমানে যাযাবর জীবন যাপন করে চলেছে। ক্ষতিগ্রস্হ কোন পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরন প্রদান করা হয়নি এবংকি হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের এখনো কোন আইনের আওয়াতায় আনা হয়নি। পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানে বাঙ্গালী জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যা পাহাড়িদের জাতিস্বত্তাকে অস্বীকার করা হয়েছে। দেশে সেনা শাসন বিদ্যমান থাকায় এবং ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের কারনে জনপ্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রেও বহু জীবন ঝুঁকি মুখোমুখী হতে হয়। আমরা জনপ্রতিনিধিরাই চাই,জনগণের স্বার্থ রক্ষায় বাঁধাহীন ভাবে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে। তাই রাষ্ট্রসরকার ও দুই দলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে করে বাঁধাহীনভাবে জনপ্রতিনিধিত্ব করার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া হয়।
আমরা দেখেছি বর্তমান শান্তিবাহিনী ও ইউপিডিএফের মধ্যকার নোতন করে মারামারি শুরু হয়েছে।। গতকাল ১৩অক্টোবর-২০২৪,তারিখেও পানছড়িতে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে বলে শুনেছি।পানছড়ি,সাজেক এখনো তাদের দুই দলের মুখোমুখী অবস্হানে রয়েছে বলেও আমরা অবগত হয়েছি। বিশেষ করে ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শান্তিবাহিনীদের স্বশস্ত্র অবস্হান আমরা প্রত্যক্ষদর্শি।আমরা চাই শান্তি বাহিনীরা তারা তাদের নিয়ন্ত্রিত বেষ্ঠনিতে ফিরে যাক। কারন, দুই দলের মুখোমুখী অবস্হানের কারনে আজ নোতন করে সংঘাত শুরু হচ্ছে।। দুই দলের ভুল বুঝাবুঝি আলোচনার মাধ্যমে সমাধা করে পাহাড়ে পাহাড়িদের এই সংঘাতময় পরিস্হিতি যাতে বন্ধ করা হয় আজকের সমাবেশ থেকে আমরা সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটি উদাত্ত্ব আহবান জানাচ্ছি।আমরা সন্তু লারমাকে উদ্ধেশ্য করে বলতে চাই-আপনি চুক্তি বাস্তবায়নে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী ডাক দেন,আমরা আপনার পাশে থাকবো।ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে আপনার স্বশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার করে নেন,সংঘাত থেকে ছড়ে দাঁড়ান।আমরা সাধারণ জনগণ সংঘাত চাইনা।আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত পরিহার করুন। যে দলে সংঘাতে জড়াবে,সেই দলকে পাহাড়ি জনগণ বয়কট করবে।। পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালুঘুদের ওপর যে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ও চলমান ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত সবি রাষ্ট্রের একটি পরিকল্পিত অংশ।। পাহাড়কে অশান্তি রেখে পুরো দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। পুরো দেশে যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান,তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান যে কৃত্রিম সংকট তা নিরচনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করার জোড় দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্তঘোষনা করেন সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি মি.মেহেন্দ্র ত্রিপুরা।
বিজ্ঞপ্তি ||
সম্পাদক – মাহমুদুল হাসান সোহাগ | ঠিকানা – বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি | মোবাইল- ০১৬৯০-১৪৪৫৪