সাজেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রতিবাদী নৃত্য ,বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫

৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিলউইমেন্স ফেডারেশন(এইচ ডব্লিউএফ) সংগঠনের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ির সাজেকে প্রতিবাদী নৃত্য পরিবেশন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটি।

“জান দেবো, তবুও মান দেবো না; সারাদেশে অব্যাহত নারী শিশু ধর্ষণ বন্ধ কর” এই শ্লোগানে এবং “পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতীয় অস্তিত্ব, বাস্তুভিটা ও নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে এইচডব্লিউএফ’র পতাকাতলে সমবেত হোন” এই আহ্বানে আয়োজিত বিক্ষোভমিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচিতে এলাকার সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

মঙ্গলবার (৪মার্চ) সাজেক গঙ্গারাম, মাজলং ও বঙ্গলতলী থেকে দীর্ঘ পাঁয়ে হেঁটে, জীপ গাড়ি, মাহেন্দ্র, বাইক দিয়ে সকাল খুব ভোর থেকে লাদু মুনি বাজার দ্ব-পদায় এসে মিলিত হয় সহস্রাধিক নারী। সকাল ৯:৩০টায় লাদুমুনি বাজার দ্ব-পদার মাঠে সমাবেশ শুরু হয়ে সমাবেশের সভাপতির সমাপনি বক্তব্যর মাধ্যমে সভা সমাপ্ত হয় সকাল ১১টায়। সমাবেশ পরবর্তি গগণবিধারী মুহু মুহু শ্লোগানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১কিলো সাজেক পর্যটন রোড পায়েঁ হেঁটে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে এসে উজোবাজার প্রদক্ষিন করে গঙ্গারাম মুখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। সেখানে, সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ স্কোয়ার্ড নামক একটি সাংস্কৃতিক থিম দ্বারা ১ঘন্টাব্যাপি এক মনোগ্ধ প্রতিবাদী সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশ করা হয়। ঘন্টাব্যাপি সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জাতীয় অস্তিত্বরক্ষা ও নারী আন্দোলনের জাগরণীমূলক গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশন বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি সুখী চাকমা’র সভাপতিত্বে ও বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নন্দা চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্র কমিটির সদস্য রিপনা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম সাজেক থানা কমিটির সভাপতি নিউটন চাকমা, পিসিপি বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সভাপতি পলেন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বলা চাকমা। এছাড়া এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবু ধন চাকমা, উপস্হিত ছিলেন ছাত্র জনতা সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্ঠামন্ডলির সদস্য নতুন জয় চাকমা, ৩৫ নং বঙ্গলতলী ইউপি ও ৩৬ নং সাজেক ইউপির জনপ্রতিনিধিরা।

সমাবেশে এইচডব্লিউএফ.রিপনা চাকমা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠা বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং বলেন,১৯৮৮সালে ৮ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশন গঠন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে নারী ধর্ষণ এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তা নিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই সংগঠণ কাজ করে যাচ্ছে।সকল প্রকার নীপিড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে এইচ ডব্লিউএফ পাশে রয়েছে,ভবিষ্যতেও থাকবে।অন্যায় ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড, খুন,গুম চালিয়ে আসছে সেনাবাহিনী।২০১৮ সালে বিলাইছড়িতে ঘর তল্লাশি নামে পাহাড়ি নারী ধর্ষণ করে।অন্তভর্তি সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পর রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতে সেনা সেটলার কর্তৃক সাম্প্রদায়িক ডাঙ্গা করা হয়।তাতে তরুন জুনান,ধনঞ্জয় ত্রিপুরা,রুবেল ও অনিক ৪জনকে সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সমতল যদি স্বাধীন হয়,তাহলে পাহাড় কেন স্বাধীন নয়।পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর যে অন্যায় ক্ষয়রানিমুলক অভিযান, তা অচিরেই বন্ধ করার দাবি জানান হিল উইমেন্স ফেডারেশনের এই নেত্রী। পাহাড় ও সমতলে যে নীপিড়ন, নির্যাতন চলমান রয়েছে এর ব্যপারে সোচ্চার হয়ে স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে রাজনৈতিক অধিকার দরকার,সেই রাজনৈতিক অধিকার আদায় করার জন্য আন্দোলনে সামিল হবার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।

যুবনেতা নিউটন চাকমা বলেন যুগে যুগে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে এবং সফল হয়েছে।রাজনৈতিক অধিকার না থাকলে মাথা উঁচু করে বাঁচার কোন সুযোগ নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যদি বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের স্বাধীন হয়,তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আগেকার সরকারের আমল থেকে বেশি নীপিড়ন, নির্যাতন, ভূমি বে-দখল ও সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে কেন? এর জবাব ইউনুসকে দিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে নারী সমাজসহ সকলকে রাজপথে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সমবেতে হবার আহ্বান জানান এই যুব নেতা।

পিসিপি নেতা পলেন চাকমা বলেন,সাজেকের নারীরা মুখে শ্লোগান দিতে না জানলেও তারা রাজপথে লড়াই সংগ্রামে কখনো পিছে নেই। গত ৫ ফেব্রুয়ারী -২০২৫,গঙ্গারাম লক্ষী ছড়ি সেনা ক্যাম্প কমান্ডার কর্তৃক এক প্রতিবন্ধি রানীকে ধর্ষণ চেষ্টার প্রতিবাদে রাজপথে আটকিয়ে যে বিচার দাবি জানিয়েছেন সেটা তারই দৃষ্টান্ত। সাজেক নারী সমাজের সাহসি আন্দোলন শুধু সাজেক রক্ষায় নয়,সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সারাদেশে আন্দোলনের এক দৃষ্টান্ত স্হাপন করে চলেছেন। অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য সমাপ্ত করেন।

সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবু ধন চাকমা বলেন,অধিকার পাওয়ার জন্য প্রতিবাদী চেতনাকে ধারন করে রাখতে হবে।জাতির মুক্তি ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হিল উইমেন্স ফেডারেশন সংগঠণ টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১০ সালে বুদ্ধপুদি,লক্ষী পুদী ভূমি রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হন- উল্লেখ করে বলেন সেই শহীদদের সামনে রেখে নারী সমাজকে আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

নারী নেত্রী উজ্জ্বলা চাকমা ৮মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের গঠণ ও তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন,সংবিধানে নারী অধিকারের কথা বলা হলেও নারী সমাজের অদিকার সংরক্ষিত নেই। ১৯৯৬ সালে, ১২জুন তৎকালীন হিল উইমেন্স ফেডারেশনর কেন্দ্রীয় সাংগঠণিক সম্পাদক কল্পনা অপহরণের বিচার আদৌ সরকার করতে পারেনি। চিহ্নিত অপরাধী লে: ফেরদৌস এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে আমরা অবগত আছি। শুধু পারিবার শুধু পারিবারিক কাজে নয়,রাজপথে নারীদেরও আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে এবং সাজেকের ভূমি রক্ষার্থে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

পরিশেষে সমাবেশ থেকে কল্পনা চাকমার অপহরণের সুষ্ঠু তদন্ত বিচারিক রায়ের মাধ্যমে চিহ্নিত অপহরণকারী লে: ফেরদৌসের শাস্তি দাবিসহ, সারাদেশে নারী ধর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেন সেটেলার প্রত্যাহার, অব্যহত ভূমি বে-দখল বন্ধ, সাজেকে নিজ বসত ভিটায় বাড়ি নির্মাণে সেনাবাহিনীর বাঁধা প্রদান বন্ধ করা এবং পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন অধিকার নিশ্চিত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ও জাতিগত সমস্যার চূড়ান্ত রাজনৈতিক সমাধানের জোড় দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন হিলউইমেন্স ফেডারেশন, বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সসহ সভাপতি ও মাবেশের সভাপতি মিস,সুখী চাকমা।হিলউইমেন্স ফেডারেশনের ৮টি দাবি নামার কথা উল্লেখ করে আগামী দিনে লড়াই সংগ্রামে হিলউইমেন্স ফেডারেশন ( এইচ ডব্রিউএফ)পতাকা তলে নারী সমাজকে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশ সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

(বিজ্ঞপ্তি)