সুষ্ঠভাবে সমাপ্ত হলো বাঘাইছড়ি উপজেলার ইউপি নির্বাচন, জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি আওয়ামীলীগ

প্রকাশিত: ২:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২

//মোঃ মহিউদ্দিন, বাঘাইছড়ি//
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ব্যাপক ভরাডুবি হয়েছে,পরাজয়ে দলীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

৭ই ফেব্রুয়ারী (সোমবার) সকাল আট টায় বিরতিহীন ভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়। আট টি ইউনিয়নের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ৫ জন, সন্তু লারমা জেএসএস (মূল) সমর্থিত ৪জন, এম এন লারমা জেএসএস সমর্থিত ৩জন, ইউপিডিএফ প্রসীদ খীসা সমর্থিত ২জন, বিএনপি নেতা ১জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ২জন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪জনসহ চেয়ারম্যান পদে মোট ২১জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৬২ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৬৫ জনসহ মোট ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এর মধ্যে ১৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

ভোট গননা শেষে বেসরকারি ফলাফলে জানা যায় ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩০নং সারোয়াতলী ইউনিয়নে সন্তু লারমা জেএসএস (মূল) সমর্থিত প্রার্থী ঘোঁড়া প্রতীকে ভূপতি রঞ্জন চাকমা পেয়েছে ৩৬৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী চশমা প্রতীক পেয়েছে ১০৯৯ ভোট, সতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীক কিরোন বিকাশ চাকমা পেয়েছে ৭৬৬ ভোট

৩১খেদারমারা ইউনিয়নে সন্তু লারমা জেএসএস (মূল) সমর্থিত প্রার্থী আনারস প্রতীকে বিল্টু চাকমা ২৮৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে,তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের নৌকা সমর্থিত প্রার্থী বিশ্ব প্রিয় চাকমা পেয়েছে ১৭৩৯ ভোট, সতন্ত্র প্রার্থী ঘোঁড়া প্রতীক বাবু সন্তুোষ কুমার চাকমা পেয়েছে ১৭২৭ ভোট।

৩২নং বাঘাইছড়ি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সমর্থিত অলিভ চাকমা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে।

৩৩ নং মারিশ্যা ইউনিয়নে সন্তু লারমা জেএসএস (মূল) সমর্থিত প্রার্থী আনারস প্রতীকে আপন চাকমা ২২১২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে,তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীক ওমর কান্তি চাকমা পেয়েছে ১০৮০ ভোট, সতন্ত্র ঘোঁড়া প্রতীক সুমন চাকমা পেয়েছে ৩০ ভোট।

৩৪নং রুপকারী ইউনিয়নে এমএন লারমা জেএসএস সমর্থিত জ্যাসমিন চাকমা (ধনেশ্বর) বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।

৩৫ নং বঙ্গলতলী ইউনিয়নে ইউপিডিএফ প্রসীদ সমর্থিত প্রার্থী ঘোঁড়া প্রতীকে জ্ঞান জ্যোতি চাকমা ৩৪৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে,তার প্রতিদ্বন্দ্বি এমএন লারমা (সংস্কার) সমর্থিত আনারস প্রতীক জ্ঞান জীব চাকমা পেয়েছে ৩৩১৫ ভোট,

৩৬নং সাজেক ইউনিয়নে ইউপিডিএফ প্রসীদ সমর্থিত প্রার্থী আনারস প্রতীক অতুলাল চাকমা ৫৪৪৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সন্তু লারমা জেএসএস (মূল) নিখিল জীবন চাকমা মোটরসাইকেল প্রতীক পেয়েছে ৩৯৩৫, সতন্ত্র প্রার্থী ঘোঁড়া প্রতীক পেয়েছে ২৭০৯ ভোট, আওয়ামী লীগের সমর্থিত নৌকা প্রতীক গরেন্দ্র ত্রিপুরা পেয়েছে ৩৭৪ ভোট।

বহুল আলোচিত সমালোচিত ৩৭নং আমতলী ইউনিয়নে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকে মজিবুর রহমান ১০৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বিএনপি নেতা ঘোঁড়া প্রতীক মোঃ আল আমিন পেয়েছে ৮২৭ ভোট, আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকে রাসেল চৌধুরী পেয়েছে ১৮৬ ভোট,আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী চশমা প্রতীক সুলতান আহমদ পেয়েছেন ১৭৭ ভোট।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ,আমাদের সমন্বয়ের অভাবেই এমনটি ঘটেছে, নির্বাচনে দলীয় নেতারা মঞ্চে একরকম বক্তব্য রাখলেও ভেতরে-ভেতরে তাঁরা অন্য খেলা খেলেছেন। যার কারণে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ নেতা যাঁর যাঁর ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, যার কারণে মাত্র ১টি চেয়ারম্যান হয়েছেন দলীয় তাও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

বাঘাইছড়ি উপজেলাতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির কারণ জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মামুন বলেন, এই উপজেলাতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের ভরাডুবির কারণ হলো সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠনের প্রভাব ,তারা সাধারণ ভোটারদের হুমকি দিয়ে বাধ্য করেছে তাদের সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য।

আমতলী ইউনিয়নের বেপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমতলী ইউনিয়নে দলীয় নেতাকর্মীদের কিছুটা ভুল ছিল,কারণ সঠিক যোগ্য প্রার্থীকে আমরা দিতে পারিনি বিধায় সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীরা সতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আমরা বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কার করেছি।